শাহীন মাহমুদ রাসেল, কক্সবাজার ::
কক্সবাজার সদর উপজেলার বাঁকখালী নদীর চান্দেরপাড়া পয়েন্টের রাবার ড্যাম দিয়ে জোয়ারের সময় সাগরের লবণাক্ত পানি ঢুকছে, ভাটার সময় আটকানো মিঠাপানি বের হয়ে যাচ্ছে। রাবার ড্যামের নির্মাণ ত্রুটির কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে এ বছর সদর ও রামু উপজেলায় প্রায় ২০ হাজার একর জমিতে বোরো চাষ ব্যাহত হওয়ার আশংকা করছেন চাষীরা।
জানা গেছে, প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে সদরের ঝিলংজা ইউনিয়নের চান্দেরপাড়ার রাবার ড্যামের মাধ্যমে বাঁকখালী নদীর মিঠাপানি আটকে সদর ও রামু উপজেলার প্রায় ২০ হাজার একর জমিতে বোরোর চাষ করা হয়ে থাকে।
জানা যায়, নিরাপদ সেচ সুবিধা নিশ্চিত করতে ১৯৯৫ অর্থবছরে কক্সবাজার স্থানীয় সরকার অধিদপ্তর (এলজিইডি)র অর্থায়নে প্রায় ৩/৪ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাঁকখালী নদীর চান্দেরপাড়া পয়েন্টে রাবার ড্যামটির নির্মাণকাজ শুরু করে।
অভিযোগ উঠেছে, এই রাবার ড্যামটি নির্মাণকালে ড্যামে রাবার লাগানোর সময় যেনতেনভাবে জোড়া দিয়ে কাজটি সম্পন্ন করা হয়। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে জোড়া লাগানো রাবারগুলো টেকসই না হওয়ায় ২০০১ সালে হঠাৎ করে ড্যামের একাধিক পয়েন্টের রাবার খুলে যায়। পরে মেরামত করার পরও ২০০৫ সালে চাষাবাদের মাঝামাঝি সময়ে আবারও রাবার ছিঁড়ে যায়। গত মৌসুমেও একইভাবে দু’বার ওই রাবার ড্যামের রাবার ছিঁড়ে গেলে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে জোড়াতালি দিয়ে কোনো মতে বোরোর মৌসুম শেষ করা হয়।
মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) চান্দেরপাড়া রাবার ড্যামে গিয়ে দেখা যায়, ওই রাবার ড্যামের ১ নং অংশে(খ) রাবারের জোড়া দিয়ে নদীর ভেতরের অংশের মিঠাপানি বের হয়ে যাচ্ছে। ২নং অংশের(খ)’র তলদেশের জোড়া দিয়েও পানি বের হতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। অপর একটি অংশ দিয়েও পানি উপচে বের হয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে চান্দেরপাড়া রাবার ড্যামের কেয়ারটেকার মোহাম্মদ সেলিমের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, বিষয়টি এলজিইডি অফিসের শাখা কর্মকর্তা, উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা, স্থানীয় চেয়ারম্যানগন ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদ্বয়কে জানানো হয়েছে। তারা সরেজমিন এসে সবার সম্মতিক্রমে রাবার ড্যামটি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, নিচের দিকে জোড়া লাগানো ওই অংশগুলো খুলে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। এতে জোয়ারের সময় সমুদ্রের লবণাক্ত পানি ঢুকে আর ভাটার সময় ড্যামের ভেতরের অংশে বোরো চাষের জন্য আটকে রাখা মিঠাপানি বের হয়ে যায়। এজন্য কৃষকদের জানিয়ে বর্তমানে বন্ধ রাখা হয়েছে। এলাকার কৃষকরা ড্যামের এ অবস্থা দেখে হতাশ হয়ে পড়েছেন।
এলাকাবাসী জানায়, এভাবে চলতে থাকলে এ বছর বোরোর চাষ মারাত্মক ব্যাহত হবে। বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে সমধান করা না হলে সদর-রামুর বোরোর চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এলাকার কৃষকরা বিকল্প ব্যবস্থা করে হলেও বোরোর চাষ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।
সমবায় অফিসার রামিজ উদ্দিন বলেন, আমরা ইতিমধ্যে এটাকে সচল রাখতে কয়েক লক্ষ টাকার কাজ করে রক্ষা করতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু তার সমাধান না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট কৃষকদের সাথে আলোচনা করে আপাততে বন্ধ রাখা হয়েছে। তাছাড়া কয়েকদিন আগে থেকে কৃষকদের জানানো হয়েছে তাড়াতাড়ি যেন সেচ দেওয়া শেষ করে। এছাড়াও বিদ্যুৎ বিভাগকে বলে দেওয়া হয়েছিলো সর্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সর্বরাহ করার জন্য।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ মাহমদুল্লাহ মারুফ বলেন, রাবার ড্যাম মেরামত করার জন্য এখানে কোনো মেকানিক নেই। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ঢাকা থেকে মেকানিক এলে এটি মেরামত করা সম্ভব হবে। আমরা বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
সংশিশ্লষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৫ সালের আগে সবুজ বিপ্লবের আওতায় বাঁকখালী নদীতে প্রথম অস্থায়ী সেচবাঁধ নির্মাণ করে তৎকালীন সদরে শুষ্ক মৌসুমে ইরি-বোরো চাষের প্রবর্তন করা হয়।
সেই থেকে প্রতি বছর সরকারি বরাদ্দে বাঁকখালী নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে পৃথক অস্থায়ী সেচবাঁধ দিয়ে পাহাড় থেকে নেমে আসা মিঠাপানি আটকে নদীর আওতায় প্রায় ৫০ হাজার একর জমিতে ইরি-বোরোর চাষ হয়ে আসছে। পরবর্তী সময় বাঁকখালী নদীতে শুষ্ক মৌসুমে পানি সংকটের সৃষ্টি হয়। এতে পর্যায়ক্রমে চাষের জমির পরিমাণও কমে এসেছে। প্রায় সময় সঠিক সময়ে সরকারি বরাদ্দের অভাবে সেচবাঁধ নির্মাণ বিলম্বিত হতো, কোনো কোনো বছর সরকারি বরাদ্দ পাওয়াও যেত না। এভাবে বোরোর চাষাবাদে নানা সমস্যায় পড়ে কৃষকদের ফসল হানি ঘটত। এ সমস্যা হতে উত্তরণে কৃষকদের দাবি ছিল বাঁকখালী নদীতে একটি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করার।
কিন্তু বাঁকখালী নদীর সদরের চান্দেরপাড়া এলাকায় ১৯৯৫ সালে প্রায় ৩/৪ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি রাবার ড্যাম নির্মাণ করার পরও বোরোর চাষ নিয়ে কৃষকদের হতাশা কাটছে না বলে দাবী সংশ্লিষ্ট কৃষকদের।
পাঠকের মতামত: